স্বদেশ বিচিত্রা অফিসে সন্ত্রাসী হামলা, সম্পাদককে হত্যার হুমকি— চট্টগ্রাম পেশাদার সাংবাদিকদের তীব্র নিন্দা

 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত দৈনিক স্বদেশ বিচিত্রা পত্রিকার কার্যালয়ে শনিবার (১৬ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা চালায়। ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত মো. ইমতিয়াজ উদ্দীন হিরনের নেতৃত্বে হামলাকারীরা অফিসে ঢুকে সাংবাদিক ও কর্মীদের জোরপূর্বক বের করে দেন এবং প্রধান দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় তারা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক, খ্যাতিমান কবি অশোক ধরকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলায় ইমতিয়াজের সঙ্গে ছিলেন ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ হিসেবে পরিচিত নান্নু এবং আরও অন্তত দুইজন অজ্ঞাত সন্ত্রাসী। তারা অফিসের দেয়াল থেকে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে, অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং কর্মীদের হেনস্তা করে। ঘটনার সময় মতিঝিল থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলের আশপাশে উপস্থিত থাকলেও তাঁরা কোনো হস্তক্ষেপ না করে নির্বিকার ছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঘটনার পর স্বদেশ বিচিত্রা পত্রিকার পক্ষ থেকে মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার জন্য আবেদন করা হয়। সেখানে যাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁরা হলেন মো. ইমতিয়াজ উদ্দীন হিরন (৫১), দারুস সালাম, ঢাকা; মো. ইমদাদুল হক (৫৬), মিরপুর, ঢাকা; খাঁন তারিকুল ইসলাম (৪৫), মিরপুর, ঢাকা; মো. আমির বক্স মণ্ডল (৫৫), ওয়ারী, ঢাকা; এবং মোস্তাক আহমেদ (৬৪), লৌহজং, মুন্সিগঞ্জ। এই ঘটনায় সাংবাদিক সমাজে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের সকল পেশাদার সাংবাদিকরা এক বিবৃতিতে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন আগ্রাসন হিসেবে উল্লেখ করেছে। পেশাদার সাংবাদিকরা বলেছেন, “এটি শুধু একটি পত্রিকা অফিসে হামলা নয়, এটি ছিল মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সত্য অনুসন্ধান এবং জনগণের জানার অধিকারকে চূড়ান্তভাবে স্তব্ধ করার চেষ্টা। যারা এই হামলা চালিয়েছে, তারা গণতন্ত্রের ভিত্তিমূল কাঁপিয়ে দিতে চায়। রাষ্ট্র যদি এদের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তবে সেই নীরবতা ইতিহাসে অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত হবে।” সাংবাদিকরা আরও বলেন, “যারা গুলি বা হুমকি দিয়ে সংবাদ থামাতে চায়, তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে—এটা অতীতও বলে, ভবিষ্যতও বলবে।” চট্টগ্রাম পেশাদার সাংবাদিকরা সরকারের প্রতি তিনটি জোরালো দাবি জানিয়েছে—এক, হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে; দুই, পত্রিকার সম্পাদক, সাংবাদিক ও কর্মীদের সর্বাত্মক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; এবং তিন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় সরকারকে এখনই দৃশ্যমান, কার্যকর ও অনমনীয় অবস্থান নিতে হবে। পেশাদার সাংবাদিকদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “আমরা থামবো না, মাথা নত করবো না। কারণ সংবাদপত্রের দরজা বন্ধ করলে সত্য জানার জানালা আরও উন্মুক্ত হয়ে যায়।” এই ঘটনায় শুধু সাংবাদিক সমাজ নয়, দেশবাসীকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার পক্ষে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম পেশাদার সাংবাদিকরা।