
চৌধুরী মুহাম্মদ রিপনঃ
পঞ্চশীল প্রার্থনাসহ ধর্মীয় আচার পালন ও কঠিন চীবর উৎসর্গের মধ্যদিয়ে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের সাপছড়ি বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘দানোত্তম কঠিন চীবর দান’ সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সাপছড়ি বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটি ও দায়ক-দায়িকাদের উদ্যোগে দিনব্যাপী বিহার মাঠে বুদ্ধ বন্দনা, বিশ্বশান্তি কামনায় প্রার্থনা, পূজনীয় ভিক্ষু সংঘকে পিণ্ডদান, জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, মঙ্গলাচরণ, বুদ্ধ পূজা, ধর্মদেশনা, পঞ্চশীল, অষ্টপরিস্কার দান, বুদ্ধ মূর্তি দান, সংঘ দান, প্রাতঃরাশ, কল্পতরুসহ নানাবিধ দান কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।
দ্বিতীয় পর্বে বেলা ২টার দিকে কঠিন চীবর ও কল্পতরু শোভাযাত্রার মাধ্যমে মঞ্চে আনা হয়। এরপর উদ্বোধনী ধর্মীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে সকল প্রাণীর হিতসুখ ও বিশ্বশান্তি কামনায় পঞ্চশীল গ্রহণ, কল্পতরু দান ও কঠিন চীবর দান সম্পন্ন করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাপছড়ি বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ ক্ষেমানন্দ ভিক্ষু। সভাপতিত্ব করেন দেবতাছড়ি মহাজনপাড়া স্বধর্ম জ্যোতি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত উ. ক্ষেমিন্দা মহাথেরো। প্রধান আশীর্বাদক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজনিকায় মার্গে ৬ষ্ঠ মহাসংঘনায়ক, ঐতিহ্যবাহী চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারের পূজনীয় বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত পামোক্ষা মহাথেরো। স্বধর্ম দেশক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়াগ্গা জনকল্যাণ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত সুমেধানন্দ মহাথেরো এবং চট্টগ্রাম কাতালগঞ্জ নব পণ্ডিত বিহারের উপাধ্যক্ষ ভদন্ত তন্ হংকর থের।
সকল ধর্মগুরুদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। এর আগে স্বাগত বক্তব্য দেন সাপছড়ি বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি অজিত কুমার তঞ্চঙ্গ্যা। দায়ক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেডম্যান অরুণ তালুকদার, বিহার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার তঞ্চঙ্গ্যা ও সহসভাপতি গুণমোহন তঞ্চঙ্গ্যা। এই সময় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ দলে দলে যোগদান করেন। জগতের সকল প্রাণীর হিতসুখ ও মঙ্গল কামনায় সমবেত প্রার্থনা ও পঞ্চশীল গ্রহণের পর পূজনীয় ভিক্ষু সংঘের উদ্দেশ্যে দানোৎসবে বিভিন্ন বিহারের ভিক্ষুগণ, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান, কার্বারি, দায়ক-দায়িকারা উপস্থিত ছিলেন। ধর্মসভা ও পঞ্চশীল গ্রহণ শেষে চীবর দানের মাধ্যমে ‘মুক্তির অহিংসা বাণী ছড়িয়ে যাক মানুষে মানুষে এবং সামনের দিনগুলোতে শান্তি ফিরে আসুক ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জীবনে’— এমন প্রার্থনার মধ্যদিয়ে চীবর দানের সমাপ্তি ঘটে।





