
চৌধুরী মুহাম্মদ রিপনঃ
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের দুর্গম নুনছড়ি পাড়া ওয়্যালুওয়াইন বৌদ্ধ বিহারে দ্বিতীয় তম শুভ কঠিন চীবর দান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ দানোৎসবের আয়োজন করে বিহার পরিচালনা কমিটি ও দায়ক–দায়িকা বৃন্দ।
সকালে বুদ্ধ পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় বুদ্ধ পূজা গাথা, পঞ্চশীল গ্রহণ, বুদ্ধ মূর্তি দান, সংঘদান, অষ্টপরিস্কার দান, পিণ্ডদানসহ নানাবিধ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। দ্বিতীয় পর্বে বেলা আড়াইটা নাগাদ কঠিন চীবর ও কল্পতরু শোভাযাত্রা মঞ্চে আনা হয়। উদ্বোধনী ধর্মীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সকল প্রাণীর হিতসুখ ও বিশ্বশান্তি কামনায় পঞ্চশীল গ্রহণ, কল্পতরু দান এবং কঠিন চীবর দান সম্পন্ন করা হয়। ধর্মীয় সভায় সভাপতিত্ব করেন নোয়াপাড়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত পুঞ্জাওয়াইন্সা মহাথেরো। প্রধান আশীর্বাদক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজনিকায় মার্গের ষষ্ঠ মহাসংঘনায়ক, ঐতিহ্যবাহী চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারের পূজনীয় বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত পামোক্ষা মহাথেরো। প্রধান ধর্মদেশক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডলুইছড়ি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত তিষা মহাথেরো, এছাড়াও বিভিন্ন বিহারের ভিক্ষু সংঘ ধর্মীয় উপদেশ প্রদান করেন। নুনছড়ি পাড়া ওয়্যালুওয়াইন বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাবেক মেম্বার ঞোলাপ্রু মারমা, সহ-সভাপতি উসাথোয়াই কার্বারি, সাধারণ সম্পাদক ম্রাথোয়াই মারমা, সাংগঠনিক সম্পাদক দুংচিংমং মারমা, সদস্য বাশিংমং মারমা প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বৌদ্ধ ধর্মমতে কঠিন চীবর দান শ্রেষ্ঠ দান হিসেবে বিবেচিত। সাধারণত তুলা থেকে সুতা তৈরি, রং করা, আগুনে শুকানো, তাঁতে বোনা ও সেলাই পর্যন্ত—সবকিছু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন করতে হয়। এই কঠিন নিয়মে তৈরি বস্ত্র ভিক্ষু সংঘকে দান করাই হলো কঠিন চীবর দান। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দানের পুণ্যফল অন্য দানের চেয়ে অতি উচ্চতর, যা বর্ষাবাস শেষে এক মাসব্যাপী উদ্যাপন করা হয়ে থাকে। এই দান অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নুনছড়ি পাড়া ওয়্যালুওয়াইন বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণ পরিণত হয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এক সামাজিক ও ধর্মীয় মিলনমেলায়।





