রাঙ্গামাটিতে ইফার (৮ম পর্যায়) প্রকল্প শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

প্রকল্প বন্ধ হলেও কেউ না খেয়ে মারা যাবে না, আল্লাহ রিজিক ছাড়া মাখলুকাত সৃষ্টি করেন নাই -এ কে এম মোজাহিদুল ইসলাম

আহমদ বিলাল খানঃ

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ উন্নয়নে মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষার উপ-প্রকল্প পরিচালক এ কে এম মোজাহিদুল ইসলাম পার্বত্য রাঙামাটি জেলার আলেম-ওলামাদের সান্তনা দিয়ে বলেন, প্রকল্পটি যদিও বন্ধ হয়ে যায়। কেউ না খেয়ে মারা যাবে না। পকেটে টাকা থাকলেই যে খাবার খেতে পারবেন, তার কোন নিশ্চয়তা নাই। রিজিকের জন্য কোন টেনশন করবেন না। আল্লাহ রিজিক ছাড়া মাখলুকাত সৃষ্টি করেন নাই।

শনিবার (১০ মে) দুপুরে রাঙ্গামাটি ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়ের মিলনায়তনে মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৮ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এ কে এম মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ের হতাশা দূর করতে হলে পবিত্র জুম্মআর বয়ানে কোরআন ও হাদিসের বিষয়ে তথ্য দিয়ে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরবেন। কিন্তু অন্যান্য ধর্মের উপর আঘাত দিয়ে কিছু বলবেন না। বরং তাদের সাথে সদাচরণ করার বিষয়ে মুসল্লিদের নসিহত করবেন। কারণ তারাও আদম এর সন্তান। আল্লাহর রাসূল মানুষকে ভালবাসতেন। আপনার মাঝেও মানুষকে ভালোবাসার সেই আচরণ নিয়ে আসেন। নিজের আমলের একটু খোঁজ নিবেন। যেমন- আপনার আমলে উদ্বুদ্ধ হয়ে কয়জন মানুষ নামাজি হয়েছে। আপনার আমলের উদ্বুদ্ধ হয়ে কয়জন নারী পর্দায় ঢুকেছে। আপনার আমলের উদ্বুদ্ধ হয়ে আপনার পরিবারের কয়জন ভাল মানুষ হয়েছে। তাহলে দেখবেন আপনার যে, মহল্লা রয়েছে সেটি জান্নাতি মহল্লায় পরিণত হয়ে যাবে। আর সবাই আপনাকে ভালোবাসে। তখন আপনার মিশন সাকসেসফুল।

তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে আমি যদি আল্লাহওয়ালা হয়ে যাই, রসুল ওয়ালা হয়ে যায়, কুরআন ওয়ালা হয়ে যায়, হাদিস ওয়ালা হয়ে যায়, নামাজি ওয়ালা হয়ে যাই, পর্দা ওয়ালা হয়ে যাই। আমাকে কেউ নিষেধ করেছে? কিন্তু না; আমরা সেটা হতে পারিনি। আলেমরা রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওয়ারিশ।

তিনি আরো বলেন, দুর্ভাগ্যের সাথে বলতে হয়, আমি রাজশাহী সহ বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব পালন করেছি। দেখেছি অনেক সহজ কুরআন শিক্ষার শিক্ষক রয়েছেন। যারা ১৭টি মাখরাজ মুখস্থ বলেতে পারেন না। আপনারাও যদি না পারেন, ছাত্ররা বলবে কিভাবে? আপনি যদি একজন ভালো টিচার হন, ছাত্ররা আপনার থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। শিক্ষার্থীদের টার্গেট নিয়ে পড়াবেন। যেমন- শুদ্ধ করে কুরআন পড়া শিখানো ও শুদ্ধ করে নামাজ পড়া শিখানো। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মাদ্দ-মাখরাজ, ইদগাম-ইখফা, নামাজের ফরয-ওয়াজিবসহ ইত্যাদি মাসলা মাসাই শিখাবেন। কারন আমরা দ্বীন প্রচারের মাধ্যমে সেবা দিতে চাই। পর্দার নসিহত করতে চাই। সর্বোপরি একটি দ্বীনি শিক্ষা পরিবেশ করে দিতে চাই। এই পরিবেশ তৈরি করবেন পাহাড়ি অঞ্চলে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন যে, দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই দায়িত্ব সচেতনতার সাথে পালন করবেন।

রাঙ্গামাটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, আমরা জানি, হাওড়া অঞ্চলের আলেম-ওলামাদের জীবন মান উন্নয়নের একটা প্রকল্প রয়েছে। এরকম একটি প্রকল্প পাহাড় অঞ্চলের আলেম-ওলামাদের জন্য যাতে করা হয়। পাহাড় অঞ্চলের আলেমগণ বেতনের দিক দিয়ে, শিক্ষার দিক দিয়ে, সব দিক দিয়ে তারা অনেক পিছিয়ে রয়েছেন। এরকম প্রকল্প নিয়ে যদি আলেম-ওলামাদের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করা যায় তাহলে আমাদের এই আলেমদের একটা পরিবর্তন আসবে। তাই আমি মনে করি হাওড় অঞ্চলের চেয়ে এই পার্বত্য অঞ্চলের আলেমদের জন্য এই প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে আলোচনা করে আমাদের পার্বত্য অঞ্চলের সকল আলেম-ওলামাদের পক্ষে জীবন মান উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আপনার বিনীত সহযোগিতা কামনা করছি।

তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনে আমি জয়েন করেছি চাকরি করা উদ্দেশ্য নয়। আমি আলেম-ওলামাদের সাথে থেকে, আলেম-ওলামাদের থেকে কিছু শিখতে ও আলেম-ওলামাদের সেবা করতে। সেই মন-মানসিকতা নিয়ে শুরু থেকে কাজ করে আসছি। আলহামদুলিল্লাহ! করোনা কালীন সময়েও পার্বত্য অঞ্চলের আলেম-ওলামাগণ যেভাবে সহযোগিতা করেছেন সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। আর এখানকার কেয়ারটেকাগন যে, ভূমিকা রেখেছেন তা ছিল একজন সুপারভাইজারের সমতুল্য সহযোগিতা। বিগত ৫ই আগস্টের পর থেকে আলেম-ওলামাদের অনেক দাবি প্রধান অতিথি মহোদয়ের কাছে তারা তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে এই পার্বত্য এলাকায় আপনারা অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে আপনাদের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আমি স্যারকে বিনীতভাবে অনুরোধ করবো আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকা, মডেল কেয়ারটেকার ও কেয়ারটেকারদের জন্য আপনি মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাবেন। যাতে করে আমাদের এই প্রকল্পের স্থায়ী একটা বন্দোবস্ত হয়। আপনি এশে যে, মনোবল দিয়েছেন, আপনাদের এই মনোবল দেখে আমাদের শিক্ষকরা পূর্ণ আস্তা ফিরে পেয়েছেন।

রাঙ্গামাটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ ইকবাল বাহার চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সদর উপজেলার ফিল্ড সুপারভাইজার মো. পেয়ার আহমদের সঞ্চালনায় বিভিন্ন দাবি-দাওয়া উপস্থাপনা করেন- ইসলামিক ফাউন্ডেশন রাঙ্গামাটি জেলা কার্যালয়ের ফিল্ড অফিসার মো. আলী হাসান ভূঁইয়া সহ সকল উপজেলার ফিল্ড সুপারভাইজার, সকল উপজেলা কার্যালয়ের মডেল কেয়ারটেকার ও কেয়ারটেকারবৃন্দ এবং মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষার শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ জেলার বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, খতিব ও উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভা শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় দোয়া এবং মোনাজাত পরিচালনা করেন, শান্তিনগর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শফিউল আলম আল কাদেরী।