
চৌধুরী মুহাম্মদ রিপনঃ
চট্টগ্রাম রাঙ্গুনিয়া উপজেলাধীন চন্দ্রঘোনায় কুষ্ঠ রোগীদের কথা চিন্তা করে ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কুষ্ঠ হাসপাতালটি, বর্তমানে বিদেশী সাহায্য বন্ধ থাকাসহ সরকারিভাবে দেশ থেকে কুষ্ঠ নির্মূলের ঘোষণায় হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বন্ধের দ্বারপ্রান্তে। শতবছর যাবৎ চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চলানোর পর কুষ্ঠ হাসপাতালের চরম অর্থনৈতিক সংকটের ফলে রোগীদের আগের মত চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে পারছেনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টান হাসপাতালের সহযোগিতায়
কুষ্ঠ রোগীদের নিরলস ভাবে সেবা দেওয়ার পাশাপাশি কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণে সরকারী স্বাস্থ্য বিভাগকে সহায়তা করে অত্রাঞ্চলের ভরসাস্থল হিসেবে ব্যাপক সুনাম কুঁড়িয়েছে, চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান কুষ্ঠ হাসপাতালটি। আমাদের প্রতিনিধি কুষ্ঠ হাসপাতাল ঘুরে দেখতে পাই, বর্তমানে হাসপাতালে ২৫ জন কুষ্ঠ রোগী যথাযথ চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় চরম মানবেতর জীপনযাপন করছে। এদিকে ৪০ বছরে অধীক যাবত চিকিৎসা নিয়ে রোগ পুরোপুরি ভাল হলেও সমাজের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ফলে সমাজে ঠাঁই মেলেনা কুষ্ঠ রোগীদের। কথা বললে এমনটিই জানান তারা কয়েকজন রোগী। তাই চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্রই তাদের একমাত্র ভরসাস্থল হিসাবে জানিয়েছেন।
কুষ্ঠ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ প্রবীর খিয়াং বলেন,
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে লেপ্রসী জিরো (কুষ্ঠ) করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সে লক্ষ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা সেবার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ইংল্যান্ড ভিত্তিক দ্যা লেপ্রসী মিশনের অর্থায়নে এই কুষ্ঠ হাসপাতাল পরিচালিত হতো। কিন্ত ১৯৯৪ সালের পর হতে তারা এখাতে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দেয়। ২০১০ সালের পর হতে তাদের অর্থায়ন একেবারে বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর হতে কোন রকম সরকারি বা বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে শর্তবর্ষী এই হাসপাতালটি। দীর্ঘ বছর যাবৎ চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চলানোর পর কুষ্ঠ হাসপাতালের চরম অর্থনৈতিক সংকটের ফলে রোগীদের আগের মত চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে পারছেনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।বর্তমানে হাসপাতালে ২৫ জন কুষ্ঠ রোগী যথাযথ চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় চরম মানবেতর জীপনযাপন করছে। হাসপাতাল করিডোরে ঘুরে দেখা যায়, দেয়ালে ফাটল ও জানালা গুলো প্রায় ভাঙা যার কারণে জানালা দিয়ে প্রায় সময় সাপ, ব্যাঙ রোগিদের ওয়ার্ডে ডুকে পড়ে অনেকটা নিরাপত্তাহীন জীবনযাপন করে এমনটি জানান কুষ্ঠ রোগিরা। হাসপাতালের প্রোগ্রাম ম্যানেজার বিজয় মারমা জানান, ১৯২০ সাল থেকে তিন পার্বত্য জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তর হতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মাঝে কুষ্ঠ রোগ ব্যাপকভাবে দেখা দেওয়ায় তা নিরসনে ইংল্যান্ডের আর্থিক সহযোগিতায় হাসপতালটি বৃহৎ পরিসরে আলোর মুখ দেখে। দেশের বিভিন্ন জেলার লোক এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আসত এবং সুস্থ হয়ে ফিরে ঘরে ফিরত।
বর্তমানে চরম আর্থিক সংকটের ফলে কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্রটি বন্ধের পথে। এসব রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে দেশ ও বিদেশী এবং সমাজের বিত্তবান, মানবিক ব্যক্তিদের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন হাসপাতাল কতৃপক্ষ ও এলাকাবাসীও আশা প্রকাশ করেন দেশের বিত্তবান সহ দেশ বিদেশের প্রতিষ্ঠান এই শতবর্ষী হাসপাতাল ও রোগীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন।