
চৌধুরী মুহাম্মদ রিপনঃ
রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের ঐতিহ্যবাহী চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার মাঠ প্রাঙ্গণে লাখো পুণ্যার্থীর অংশগ্রহণে বিশ্বশান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) চিৎমরম ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটি ও দায়ক-দায়িকা উদ্যোগে দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় বুদ্ধ বন্দনা, বিশ্বশান্তি কামনায় প্রার্থনা, পূজনীয় ভিক্ষু সংঘকে পিণ্ডদান, জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, মঙ্গলাচারণ, বুদ্ধ পূজা, ধর্মদেশনা, পঞ্চশীল, অষ্টপরিস্কার দান, বুদ্ধমূর্তি দান, সংঘ দান, প্রাতঃরাশ ও কল্পতরুসহ নানা দান অনুষ্ঠান।
দ্বিতীয় পর্বে বেলা ২টার দিকে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে কঠিন চীবর ও কল্পতরু শোভাযাত্রা মঞ্চে আনা হয়। এরপর উদ্বোধনী ধর্মীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সকল প্রাণীর হিতসুখ ও বিশ্বশান্তি কামনায় পঞ্চশীল গ্রহণ, সংঘ দান, অষ্টপরিস্কার দান, বুদ্ধমূর্তি দান, কল্পতরু দান ও কঠিন চীবর দান সম্পন্ন হয়। ধর্মসভায় সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট হ্লাথোয়াই মারমা ও সাচিংউ মারমার সঞ্চালনায়, রাজনিকায় মার্গের ৬ষ্ঠ মহাসংঘনায়ক ও ঐতিহ্যবাহী চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ পূজনীয় ভদন্ত পামোক্ষা মহাথেরোর সভাপতিত্বে প্রধান ধর্মদেশক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়াগ্গা জনকল্যাণ বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত সুমেধানন্দ মহাথেরো এবং বিশেষ ধর্মদেশক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারের ভদন্ত ওয়ানাসারা থের। দায়কদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ, রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য ক্যওশিংমং মারমা, জেলা যুগ্ম সম্পাদক ও কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন, রাঙামাটি জেলা মারমা ঐক্য পরিষদের সভাপতি সাজাইমং মারমা, কাপ্তাই উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক উথোয়াইমং মারমা এবং রাজস্থলী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নুরুল আমিন চৌধুরীসহ আরও অনেকে। এসময় সকল ধর্মগুরু ও অতিথি দায়কদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়।
এর আগে স্বাগত বক্তব্য দেন কঠিন চীবর দানোৎসবের আহ্বায়ক মংসুইপ্রু মারমা।
তিন পার্বত্য জেলা থেকে লাখো পুণ্যার্থীর আগমনে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষরা দলে দলে যোগ দেন। জগতের সকল প্রাণীর হিতসুখ মঙ্গল কামনায় সমবেত প্রার্থনা ও পঞ্চশীল গ্রহণের পর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উদ্দেশ্যে দানোৎসবে বিভিন্ন বিহারের পূজনীয় ভিক্ষু সংঘ, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান, কার্বারি এবং অসংখ্য দায়ক-দায়িকা উপস্থিত ছিলেন। ধর্মসভা ও পঞ্চশীল গ্রহণের পর চীবর দানের মধ্য দিয়ে —
‘মুক্তির অহিংসা বাণী ছড়িয়ে যাক মানুষে মানুষে, আর আগামীর দিনে শান্তি ফিরে আসুক ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জীবনে’ — এমন প্রার্থনার মধ্য দিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।





