হিংসা, যুদ্ধ নয়, শান্তি এবং মানবাধিকারের প্রতিষ্ঠা: মোঃ শামছুল আলম

ডেক্স রিপোর্টঃ

১০ ডিসেম্বর, বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। ১৯৫০ সাল থেকে প্রতি বছর এই দিনটি পৃথিবীজুড়ে পালিত হচ্ছে। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মানবাধিকার সংক্রান্ত সার্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়, যা আজও বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের জন্য একটি মৌলিক নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করছে। সেই থেকে জাতিসংঘ এই দিনটিকে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং এই দিনটি বিশ্বের প্রতিটি দেশের নাগরিকদের জন্য মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি মাইলফলক হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, বাংলাদেশ তথ্য ও মানবাধিকার ফাউন্ডেশনসহ নানা সংগঠন দিবসটি পালনের মাধ্যমে এই বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে।

এ বছরের বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে—”সবার জন্য স্বাধীনতা, সম অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা”। এটি মানবাধিকার আন্দোলনের প্রতি আমাদের আরো গভীর দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছে।

মানবাধিকার: মৌলিক অধিকার ও তার বাস্তবায়ন

মানবাধিকার দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই আমাদের মনে রাখা উচিত, মানবাধিকার শুধু একটি তত্ত্ব নয়, এটি প্রতিটি মানুষের জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য অধিকার। মৌলিক অধিকার যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, এবং সমাজে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের অধিকার—এছাড়া রাজনৈতিক অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ভোটাধিকার ইত্যাদি মানবাধিকার সুরক্ষিত করা প্রয়োজন। আজকের সভ্য পৃথিবীেও বহু মানুষের এই মৌলিক অধিকারগুলো সুরক্ষিত হয়নি।

বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, বৈষম্য এবং দারিদ্র্যের কারণে মানুষের মৌলিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। বহু দেশে লাখ লাখ মানুষ তাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, তাদের মুক্তি এবং উন্নতির পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে, মানবাধিকার শুধু একটি নৈতিক আদর্শ নয়, বরং একটি জরুরি ও মৌলিক প্রয়োজনীয়তা হিসেবে আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

যুদ্ধ ও অশান্তি: মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণ

আজও পৃথিবীর নানা অঞ্চলে যুদ্ধ, অশান্তি, বৈষম্য এবং সংঘাত চলছে। এই ধরনের পরিস্থিতি মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় পরিপন্থী। যুদ্ধের ফলে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষ জীবন হারাচ্ছে, হাজার হাজার নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, এবং সমাজের ভিত্তি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই হিংসাত্মক পরিবেশে মানুষ কেবল শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, বরং তাদের মৌলিক মানবাধিকারও অবজ্ঞার শিকার হচ্ছে।

যুদ্ধ, জাতিগত বৈষম্য, ধর্মীয় বিভেদ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে লাখ লাখ মানুষ শরণার্থী হয়ে পড়ছে, যাদের ন্যূনতম মানবাধিকারও সুরক্ষিত নয়। দারিদ্র্য ও শিক্ষা-অবস্থার কারণে মানুষের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে উঠছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য বিশ্বব্যাপী শান্তির প্রয়াস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আধুনিক পৃথিবী: মানবাধিকার ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ

বর্তমান বিশ্বে কিছু বিশেষ ঘটনা এবং প্রতিকূল পরিবেশ পরিস্থিতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের নতুন কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থের প্রতি অতিরিক্ত লোভ, স্বার্থের লড়াই, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন এবং বাজারজাতকরণের ফলে মানুষের জীবনে নানা ধরনের বৈষম্য এবং পরিবেশগত সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশদূষণ, প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার—এসবই মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক অদৃশ্য কারণ হিসেবে কাজ করছে।

এই পরিবর্তনগুলি শুধু পরিবেশের ক্ষতি করছে না, বরং বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি করছে, যার ফলস্বরূপ অনেক মানুষ নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পথে আমাদের দায়িত্ব

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস একটি সুযোগ, যখন আমরা আমাদের মানবাধিকার সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এর বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারি। আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত—হিংসা, যুদ্ধ নয়, শান্তি ও মানবাধিকারের প্রতিষ্ঠা।তাই এবারের প্রতিপাদ্য কে সামনে রেখে ‘আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ এখনই’।

আজকের এই বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে, আমাদের প্রত্যেকের মনে এই প্রতিশ্রুতি নেওয়া উচিত যে, আমরা মানবাধিকারের সুরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবো। শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, সমাজে সম অধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, এবং পরিবেশের সুরক্ষা—এই সবই মানবাধিকার আন্দোলনের অংশ।

এই স্লোগান যেন শুধুমাত্র একটি দিবসের কথামাত্র না হয়, বরং এটি আমাদের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠুক। আমাদের সকলের জন্য এক সুখী, শান্তিপূর্ণ, এবং মানবাধিকার সুরক্ষিত পৃথিবী গড়ে তুলতে হবে।