
মিকেল চাকমা, রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধিঃ
তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি (বৈসুক, সাংগ্রাই ও বিঝু) উপলক্ষে প্রথম দিনে পানিতে ফুল ভাসিয়ে বরণ করে নিল ফুল বিঝু। বৈসাবি উৎসব মূলত তিন দিন বর্ণিল আয়োজনে উৎসব পালন করা হয়। প্রথম দিন ফুল বিঝু, দ্বিতীয় দিন মূল বিঝু চৈত্র সংক্রান্তি এবং তৃতীয় দিন নতুন বছর। যদিও বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে আগে থেকে সপ্তাহব্যাপী ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা, নাচ, গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন পুরনো সংস্কৃতির আয়োজন শেষে মূল এই তিনটি উৎসব শুরু হয়।
প্রথম দিন অর্থাৎ ফুল বিঝুতে মূলত পানিতে ফুল ভাসিয়ে এবং ঘরবাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো হয়।
দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ মূল বিঝু (চৈত্র সংক্রান্তি) এই দিনে ঢেঁকিতে ধান ভেঙ্গে চাউল গুড়ো করে ভরা পিঠা, সান্যা পিঠা,বিনি হোগা,কলা পিঠা ও পায়েস ইত্যাদি নামের হরেক রকমের পিঠা তৈরি করা হয়। বিঝুর সবচেয়ে বেশি আর্কষণ হচ্ছে ‘পাজন’।যেটি হরেক রকমের সবজি দিয়ে রান্না করা হয়। এ-সব কিছু দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় এবং পাড়াপড়শি সবাই এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। শুধু তাই নয় এই দিনে সকল প্রাণীদের মাঝে ও বিঝুর আমেজ ভাগাভাগি স্বরুপ মোরগ-মুরগিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছোট ছেলেমেয়েরা ধান দিয়ে থাকে। যদিও যুগের পরিবর্তনের সাথে কিছু সংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে।
তৃতীয় দিন অর্থাৎ নতুন বছর (নো বজর) এই দিয়ে যার যার ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিহার, মন্দিরে গিয়ে পূজা ও প্রার্থনা করে থাকেন। পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরন করে নেয়।ছোটরা বড়দের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন,বড়দের শ্রদ্ধাস্বরুপ গোসল করিয়ে দেন। বড়রা ছোটদের স্নেহ ও আদর করেন। এই দিনেও এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে মানুষজন ঘুরে বেড়ায় এবং অতিথি আপ্যায়ন করেন। এইসব উৎসবে শুধু ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠী নয় অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষজন ও আনন্দ, উৎসব ভাগাভাগি করে উৎযাপন করে। সবকিছু মিলিয়ে এযেন এক বৈচিত্র্যময় পাহাড়। এভাবে শেষ হয় পাহাড়ের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব বৈসাবি (বৈসুক, সাংগ্রাই,বিঝু) ।