
একদিন যিনি ছিলেন রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজের সাধারণ একজন ছাত্র, সময়ের পরিক্রমায় তিনিই হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের রুপালি পর্দার জনপ্রিয় চিত্রনায়ক। সেই শাকিল খানই আবার ফিরলেন তাঁর শিকড়ে—ফিরলেন ছাত্রজীবনের স্মৃতিবাহী কলেজ প্রাঙ্গণে।
অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য, বাংলাদেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিল খান রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজে পড়াশোনা করেছেন। অতীতের সেই অধ্যায় যেন হঠাৎ করেই বর্তমানের আলোয় ফিরে আসে গত ৯ ডিসেম্বর ২০২৫। সেদিন দুপুর আড়াইটার দিকে সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কারে করে তিনি উপস্থিত হন রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজে।
এবারের সফরটি ছিল একান্তই ব্যক্তিগত প্রয়োজনে। স্নাতক পাশসংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রের জন্য তিনি কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অধ্যক্ষের কক্ষে তিনি উপস্থাপন করেন তাঁর ছাত্রজীবনের পরিচয়পত্র ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র। মুহূর্তেই যেন কলেজের দেয়ালজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে নস্টালজিয়ার আবহ। বাগেরহাট জেলার সন্তান হলেও শাকিল খানের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রামে। আগ্রাবাদে বাবার চাকরি ও ব্যবসার সুবাদে পরিবারসহ তিনি দীর্ঘদিন এখানেই বসবাস করেন। সে কারণেই চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় তাঁর সাবলীলতা আজও চোখে পড়ার মতো। শিক্ষাজীবনের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়—১৯৮৮ সালে পটিয়ার শাহ আমির উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৯০ সালে ওমরগনি এমইএস কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরবর্তীতে রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ১৯৯২ সালে ডিগ্রি অর্জন করেন শাকিল খান। এখান থেকেই জীবনের আরেক অধ্যায়ে পা রাখার প্রস্তুতি শুরু হয় তাঁর।
অধ্যক্ষের কক্ষে উপস্থিত শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপচারিতায় শাকিল খান স্মৃতিচারণ করেন তাঁর কলেজজীবনের নানা গল্প। এক শিক্ষক মজা করে বলেছিলেন, “সিনেমায় বহুবার দেখেছি, কিন্তু সামনে বসে গল্প করার কথা কল্পনাও করিনি।” উত্তরে হাসিমুখে শাকিল খান বলেন—
“পৃথিবীটা গোল—ঘুরতে ঘুরতে মানুষের সঙ্গে দেখা তো হতেই পারে; এতে আর বিচিত্র কী?”
একই দিন কলেজে অনুষ্ঠিত রোভার স্কাউটের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে বিশেষ অতিথির আসনে বসানো হয় তাঁকে। শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে শোনেন তাঁর জীবন, সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প—যা তাদের জন্য হয়ে ওঠে অনুপ্রেরণার এক জীবন্ত উদাহরণ।
ছাত্র থেকে চিত্রনায়ক—এই দীর্ঘ পথচলায় রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজ যে তাঁর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, তা যেন এই সফরের মধ্য দিয়েই আবার নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিল শাকিল খান। তাঁর এই ফিরে আসা কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মাঝে সৃষ্টি করেছে ব্যাপক আগ্রহ, গর্ব আর উৎসাহ।





