
রিপন মারমা, কাপ্তাই প্রতিনিধিঃ
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মারমা সম্প্রদায়ের হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ণাঢ্য রথটানা উৎসব — স্থানীয় ভাষায় যা পরিচিত ‘রাথাঃ পোয়ে’ বা ‘সাংফোওয়া হ্নাং’ নামে। আশ্বিন মাসের প্রবারণা পূর্ণিমা তিথি উপলক্ষে আয়োজিত এ উৎসবে গৌতম বুদ্ধকে দৃষ্টিনন্দন ময়ুর আদলের রথে বসিয়ে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি রাইখালীর নারানগিরি জাদী থেকে শুরু হয়ে দুর্গম হাপছড়ি এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে মাঝিপাড়া জাদী প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। রথটানা উৎসবকে ঘিরে হাজারো মারমা তরুণ-তরুণী ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নেচে–গেয়ে, গানে–নৃত্যে ও শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তোলেন। ‘ছংরাসি ওয়াগ্যোয়াই হ্লা, রাথাঃ পোয়ে লাগাইত মে’ (অর্থাৎ ‘শরৎ এসেছে, চল রথটানা উৎসবে’)— এমন ঐতিহ্যবাহী গান গেয়ে তারা আনন্দে মাতেন।
রাইখালী মৌজা হেডম্যান উসুয়েসুয়ে মারমা (মিশু) বলেন, “রথে কাগজের বিহার বসানো হয়, বুদ্ধমূর্তির আসন কারুকাজে সাজানো হয় এমনভাবে, যাতে দেখলেই ভক্তদের মনে শ্রদ্ধা ও ভক্তির সঞ্চার হয়। মোমবাতি প্রজ্বলন, বাঁশের ভেলা তৈরি, রথে চাকা ও রশি সংযোজন — প্রতিটি কাজেই থাকে ধর্মীয় সতর্কতা ও সৌন্দর্যের সমন্বয়।স্থানীয় মারমা প্রবীণ সুইসাইং মারমা জানান, “আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত ভিক্ষুরা বর্ষাবাস পালন করেন। এ সময় তারা বৌদ্ধবিহার ত্যাগ করেন না। বর্ষাবাস শেষে যে উৎসব হয়, তাকেই প্রবারণা উৎসব বা ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে বলা হয়। প্রবারণা পূর্ণিমা মারমা সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাসের বর্ষাবাস শেষে এই পূর্ণিমায় সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান, প্রদীপ পূজা ও ফানুস ওড়ানোর মধ্য দিয়ে পালিত হয় এই উৎসব। উৎসবস্থলে তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান — থেকে হাজারো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও দর্শনার্থী সমবেত হন। রাতে রথটিকে ‘জল দেবতার উদ্দেশ্যে’ কর্ণফুলী নদীর ঘাটে ভাসিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটে এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবের। এটি শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং ভক্তি, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির এক অনন্য মিলনমেলা হয়ে উঠেছিল কাপ্তাইয়ের রাইখালীতে।





